অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধের যেকোনো দিন এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একইসাথে তিনি সরকারের গৃহীত বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
সরকারের তিন মূল ম্যান্ডেট:
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেন, “সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন – এই তিনটি ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে তাঁরা দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।” তিনি বিশ্বাস করেন, আগামী রোজার ঈদের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের ক্ষেত্রে একটি গ্রহণযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হবে, বিশেষ করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায়।
নির্বাচন ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার:
ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনকে দেশের দীর্ঘস্থায়ী সংকটের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে ড. ইউনূস বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করাই বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। এর জন্য নির্বাচনের সাথে সরাসরি জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার এবং সুশাসন নিশ্চিত করার উপর তিনি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।
‘জুলাই সনদ’ ও রাজনৈতিক সংস্কার:
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়নের আশা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। এই সনদে সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে দলগুলো যেসকল বিষয়ে একমত হবে, সেগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং বাস্তবায়নের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হবে।
গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ও পদক্ষেপ:
- মিয়ানমার করিডর বিতর্ক: রাখাইনে মানবিক সহায়তার জন্য বাংলাদেশকে করিডর দেওয়ার খবরকে ‘সর্বৈব মিথ্যা’ বলে অভিহিত করেন।
- রোহিঙ্গা সংকট: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতে মিয়ানমার সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে বলে জানান।
- জুলাই হত্যাযজ্ঞের বিচার: জুলাই-আগস্ট মাসের হত্যাযজ্ঞসহ বিগত সময়ের গুম-খুন ও আর্থিক দুর্নীতির বিচার শুরু হয়েছে। আদালতের অনুমতিতে বিচার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
- গুম কমিশন: গুমের ঘটনা তদন্তে স্বাধীন কমিশন কাজ করছে এবং এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে।
- অর্থনৈতিক অগ্রগতি: গত ছয় মাসে ৭৫৬ মিলিয়ন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। বিভিন্ন দেশের সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। কাতারের বিনিয়োগে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং মাদ্রাসা শিক্ষায় আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
- চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন: চট্টগ্রাম বন্দরকে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে উল্লেখ করে এর আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর জোর দেন।
অপপ্রচার মোকাবিলা ও জাতীয় ঐক্য:
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পতিত ফ্যাসিবাদ ও তার দেশি-বিদেশি দোসররা নতুন বাংলাদেশ গড়ার সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে পদে পদে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।” তিনি দেশবাসীকে এ ধরনের অপপ্রচার সম্পর্কে সতর্ক থাকার এবং জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানান।
এই ভাষণের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর সরকারের কার্যক্রমের একটি চিত্র তুলে ধরেছেন এবং আগামী দিনের জন্য দেশবাসীর সমর্থন ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন। 🇧🇩⚖️💼