গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ খাঁন সরকারের সাথে আনুষ্ঠানিক আলোচনার পরিবর্তে বিচারিক সংস্কার এবং জাতীয় নির্বাচনের জন্য একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। রোববার রাজধানীর বিজয়নগরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এই আহ্বান জানান। সমাবেশটি মূলত জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণ, দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ অন্যদের গ্রেফতারের দাবি এবং বরিশালে গণঅধিকার পরিষদের কর্মীদের উপর হামলার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত হয়।
সংলাপ, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের অবস্থান:
মোঃ রাশেদ খাঁন তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, “চা-নাস্তা খাওয়ানোর সংলাপ করবেন না। সংলাপ ফলপ্রসূ করতে সিদ্ধান্ত জানান।” তিনি সরকারের কাছে বিচার ব্যবস্থা, সামগ্রিক সংস্কার প্রক্রিয়া এবং নির্বাচনের একটি সমন্বিত রোডম্যাপ প্রকাশের দাবি করেন। তাঁর প্রস্তাব, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা হোক। তিনি আরও বলেন, “বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন একে-অপরের পরিপূরক। কোনটাকে কোনটার মুখোমুখি করে ধোঁয়াশা করবেন না।” তিনি আসন্ন সংলাপ থেকে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পাশাপাশি নির্বাচনের পূর্বে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার এবং ‘গণহত্যার’ (সম্ভবত পূর্ববর্তী সময়ের ঘটনাবলির প্রতি ইঙ্গিত করে) একটি পথনকশা প্রকাশেরও দাবি জানান।
জাতীয় পার্টি ও জিএম কাদের প্রসঙ্গে কঠোর সমালোচনা:
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের প্রতি তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “শেখ হাসিনার বিচার হলে জিএম কাদেরের কেন বিচার হবে না?” তিনি আওয়ামী লীগের মতো জাতীয় পার্টিরও সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং দলের নিবন্ধন বাতিলের দাবি তোলেন। রাশেদ খাঁনের মতে, “এই দেশের গণতন্ত্র হত্যার জন্য হাসিনা যেভাবে দায়ী, ঠিক একইভাবে জিএম কাদেরও দায়ী।” জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে মামলা থাকা সত্ত্বেও তাঁকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না, এবং সরকারের কোন মহল জাতীয় পার্টিকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে, সে বিষয়েও তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, জাতীয় পার্টির মিছিল-সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি এবং জিএম কাদেরের পূর্ববর্তী বক্তব্য (“আওয়ামী লীগকে দূরে রেখে নির্বাচন করা যাবে না, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা যাবে না”) প্রমাণ করে যে, জিএম কাদের ক্ষমতাসীনদের সহযোগী।
হামলার প্রতিবাদ ও কর্মসূচির হুঁশিয়ারি:
বরিশালে গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানান রাশেদ খাঁন। অন্যথায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এবং এর দায় সরকারকে নিতে হবে বলে তিনি সতর্ক করেন। এছাড়াও, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জিএম কাদেরকে গ্রেফতার করা না হলে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেন তিনি।
উক্ত সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দীনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নুরুল করিম শাকিলের সঞ্চালনায় দলের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। গণঅধিকার পরিষদের এই কঠোর অবস্থান এবং সুনির্দিষ্ট দাবিগুলো দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। 🇧🇩🏛️