তারেক রহমানের ‘কঠিন বার্তা’, ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে বাড়ছে দূরত্ব!
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও উত্তাপ ছড়াচ্ছে বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মসূচি ও বক্তব্য। নয়াপল্টনে বিশাল ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ থেকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা নতুন করে রাজনৈতিক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই এটিকে বিএনপির ‘এক দফা’ আন্দোলনের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। কিন্তু কেন এই কঠোর অবস্থান? অন্তর্বর্তী সরকারের সাথেই বা বিএনপির দূরত্বের কারণ কী? 🤔
জনভোগান্তি ও কর্মসূচির কৌশল:
গত বুধবার বিএনপির ডাকা ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ ১৫ লাখ লোক সমাগমের ঘোষণা দেওয়া হলেও, কর্মদিবসে এমন বিশাল আয়োজন নগরজীবনে অবর্ণনীয় ভোগান্তি সৃষ্টি করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ বা প্যারেড গ্রাউন্ডের মতো বিকল্প স্থানে এই সমাবেশ করলে জনদুর্ভোগ অনেকটাই কমানো যেত। একই দিনে শাহবাগে জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশও যানজট পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। জনগণের কল্যাণের কথা বলা দলগুলোর এমন কর্মসূচি জনমনে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
তারেক রহমানের বার্তা ও সরকারের প্রতি সংশয়:
তারেক রহমান তাঁর বক্তব্যে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর মতে, সংস্কারের নামে সরকার অপ্রয়োজনীয় কালক্ষেপণ করছে এবং সরকারের ভেতরে ও বাইরে কারও কারও ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। এমনকি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বিএনপিদলীয় প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে শপথ না পড়ানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় না, যারা আদালতের নির্দেশকে অবজ্ঞা করে, তাদের কাছ থেকে কতটুকু সংস্কার আশা করতে পারি?” এই বক্তব্যের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন তিনি। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে গণতন্ত্রের যাত্রা বাধাগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।
‘ইউনূস সরকার’ বিতর্ক ও বিএনপির উদ্বেগ:
সম্প্রতি ‘জুলাই ঐক্য’ নামে একটি সংগঠনের ‘মার্চ ফর ইউনূস’ কর্মসূচি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে পাঁচ বছরের জন্য সরকার গঠনের দাবি বিএনপির মধ্যে নতুন করে সন্দেহ ও সংশয় তৈরি করেছে। যদিও গণভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা প্রলম্বিত করার অতীত অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে সুখকর নয়।
কর্মসূচির ধরন পরিবর্তনের আহ্বান:
‘তারুণ্যের সমাবেশে’ বিপুল জনসমাগম ঘটিয়ে বিএনপি তরুণদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করলেও, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বড় সমাবেশের চেয়ে সেমিনার ও টিভি বিতর্কের মতো কর্মসূচি রাজনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে অধিক কার্যকর হতে পারে। বিএনপির সাম্প্রতিক ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক ভাবনা ও অর্থনৈতিক মুক্তি’ শীর্ষক সেমিনারটি সেই দিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
আস্থার সংকট ও আলোচনার ফলাফল শূন্য:
অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে বিএনপির সম্পর্ক দিন দিন শীতল হচ্ছে। বিএনপি তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ চাইলেও সে বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। প্রধান উপদেষ্টার সাথে আলোচনায় ফলপ্রসূ কোনো সমাধান আসেনি, বরং উভয়পক্ষই নিজ নিজ অবস্থানে অনড় রয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। বিএনপি মনে করছে, সরকার তাদের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করছে।
ডিসেম্বর বনাম জুন: নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে বিরোধ:
বিএনপিসহ প্রায় ৩০টি দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইলেও, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে দেশের বর্তমান ‘যুদ্ধাবস্থা’ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে ডিসেম্বরে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তারা ১৩টি দলের সমর্থন নিয়ে জুনের পরে নির্বাচন করতে আগ্রহী। বিএনপি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে সরকারের প্রতি সমর্থন ধরে রাখা কঠিন হবে, যা প্রকারান্তরে অনাস্থারই ইঙ্গিত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচন নিয়ে এই অনিশ্চয়তা দেশের সার্বিক পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। বিএনপির এক নেতার মতে, ডিএমপি তাদের সমাবেশের বিষয়ে কোনো সহযোগিতামূলক সাড়া দেয়নি, যা আওয়ামী লীগ আমলের আচরণের চেয়েও হতাশাজনক। এই জটিল পরিস্থিতিতে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। ⏳🇧🇩