ভারত–পাকিস্তানের হাতে পারমাণবিক বোমার চেয়েও ভয়ংকর অস্ত্র – ‘বয়ান’!
WhatsApp
WhatsApp Channel
Join Now
Telegram Telegram Channel Join Now

পারমাণবিক বোমা নয়, আসল অস্ত্রটি হচ্ছে ‘বয়ান’

সাম্প্রতিক ভারত–পাকিস্তান সংঘাত যেন একটি নতুন ধরনের যুদ্ধের উদাহরণ। এখানে ক্ষেপণাস্ত্রের গুরুত্ব থাকলেও, আসল লড়াই হয়েছে ভাষা, বয়ান এবং গণমাধ্যমের ময়দানে

এই দুই দেশের হাতে পারমাণবিক বোমা থাকলেও, সবচেয়ে ভয়ংকর অস্ত্রটি হচ্ছে—গল্প বানানোর ক্ষমতা


অপারেশন সিঁদুর থেকে শুরু – অপারেশন বুনিয়ান আল-মারসুস পর্যন্ত

ভারত ঘোষণা করেছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’, আর পাকিস্তান জবাব দিয়েছিল ‘অপারেশন বুনিয়ান আল-মারসুস’। কিন্তু যদি আপনি মনে করেন এটি কেবল সামরিক যুদ্ধ, তাহলে আপনি আসল খেলাটা মিস করছেন

এটি ছিল না কেবল বন্দুকের যুদ্ধ – এটি ছিল বয়ানের যুদ্ধ । এখানে যুদ্ধের ময়দান ছিল টিভি স্ক্রিন, শিরোনাম, সোশ্যাল মিডিয়া এবং প্রচারমাধ্যম।

গণমাধ্যমের হাতে প্রতিটি ঘটনা যেন চিত্রনাট্যের মতো পরিকল্পিতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। প্রতিটি ছবি ছিল সাজানো, প্রতিটি মৃত্যু ছিল রাজনৈতিক হাতিয়ার।


ভারতের বয়ান: ন্যায়ের পথে যুদ্ধ

ভারত ৬ মে হামলা চালিয়েছিল বলে দাবি করেছে। কিন্তু তাঁদের গণমাধ্যম এটিকে উপস্থাপন করেছে ন্যায়যুদ্ধ হিসেবে। এটা ছিল নাকি ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান’

ভারত দাবি করেছে, “২৪টি হামলা চালিয়ে ৯টি সন্ত্রাস ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে। কোনো বেসামরিক ক্ষতি হয়নি।” কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কি সত্যিই কোনো মানুষ মারা যায়নি?

সংবাদশিরোনামে লেখা হয়েছে:

  • “সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ২.০”
  • “ভারতীয় সেনার গর্জন পৌঁছাল রাওয়ালপিন্ডিতে”
  • “ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত”

ভারত বলছে, এটি ছিল পেহেলগামে ভারতীয় পর্যটকদের হত্যার জবাব। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, “তারা ভারতের কপালে আঘাত করেছিল, আমরা তাদের বুকে আঘাত করেছি।”

এ ভাষা যেন সিনেমার ডায়লগের মতো!


পাকিস্তানের পাল্টা বয়ান: পবিত্র প্রতিরক্ষা

৩ দিন পর পাকিস্তান পাল্টা জবাব দিয়েছে ‘অপারেশন বুনিয়ান আল-মারসুস’ নামে। আরবিতে যার অর্থ—“লোহার প্রাচীর” । নামটাতেই সব বোঝা গেছে। এটি ছিল শুধু প্রতিশোধ নয়, এটি ছিল ধর্মীয় ঘোষণা

পাকিস্তানি গণমাধ্যম ভারতের হামলাকে বৈধ করেছে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে। মসজিদে হামলা, বেসামরিক মানুষের মৃত্যু, শহীদের ছবি – সব মিলিয়ে পাকিস্তান নিজেকে তুলে ধরেছে আক্রান্ত ও আত্মরক্ষার্থী দেশ হিসেবে।


উভয় দেশই নিজেদের নায়ক প্রমাণ করতে ব্যস্ত

ভারত বলছে, “আমরা নৈতিকভাবে যুদ্ধ করেছি।”
পাকিস্তান বলছে, “আমরা শক্তি দেখিয়েছি।”

কিন্তু কে আক্রমণকারী? কে আত্মরক্ষার্থী?
সত্য কোথায়?

এখানেই গণমাধ্যমের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি ফুটে উঠেছে। দুই দেশই নিজেদের নৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে ব্যস্ত।


কে জালিম, কে মজলুম?

ভারত পাকিস্তানকে উপস্থাপন করেছে এক ‘সন্ত্রাসের কারখানা’ হিসেবে। এক পারমাণবিক দানব, যে কোনো মুহূর্তে আক্রমণ করতে পারে।

পাকিস্তান ভারতকে দেখিয়েছে এক ফ্যাসিবাদী ও হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র হিসেবে। তাদের দাবি: ভারতের হামলা ছিল ধর্মযুদ্ধ । নরেন্দ্র মোদি হচ্ছেন আক্রমণকারী, ভারত হচ্ছে দখলদার

এই দুই বয়ানের মধ্যে যে কোনো সংলাপ সম্ভব নয়। কূটনীতি হয়ে উঠেছে দুর্বলতা , আপস হয়েছে বিশ্বাসঘাতকতা


যুদ্ধের সত্যিকার পরিণতি: নিরপরাধ মানুষের কষ্ট

বেসামরিক মানুষ মারা গেছেন। ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। মানুষ ঘরছাড়া। কিন্তু এই মানবিক কষ্টের কথা কেউ শোনার চেষ্টা করছে না।

ভারত বলছে, “আমরা জঙ্গিদের লক্ষ করে হামলা করেছি।”
পাকিস্তান বলছে, “ভারতি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে।”
কিন্তু কোনটা সত্য?
কোনটা মিথ্যা?

সত্য কেবল এক দিকে নয় – সত্য বহুমুখী। কিন্তু গণমাধ্যমের হাতে সত্য ক্রমাগত বিকৃত হচ্ছে


বয়ানের রাজনীতি: যুদ্ধের আগে থেকে যুদ্ধের পর পর্যন্ত

ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের গণমাধ্যমই তাঁদের বয়ান দিয়ে নিজেদের যুদ্ধ বৈধ করতে ব্যস্ত ছিল। একে অপরকে তামাশা বানিয়ে নিজেদের নায়ক করে তুলেছে।

এই ধরনের বয়ান পরবর্তী সংঘাতের বীজ বপন করে। এক পক্ষ যখন আরেক পক্ষকে ন্যায়ের বাইরে চিহ্নিত করে, তখন যুদ্ধ থেকে সংলাপ হওয়া মুশকিল হয়ে ওঠে।


ভারত–পাকিস্তানের বয়ান কি আমাদের শিক্ষা দেয়?

ভারত ও পাকিস্তানের এই যুদ্ধ আমাদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ নিয়ে এসেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় পারমাণবিক বোমার চেয়েও বিপজ্জনক হলো ভুয়া বয়ান ও মিথ্যা প্রচার

আমাদের যদি সত্যিকার শান্তি চাই, তবে এই বয়ানের পরিবর্তন হওয়া দরকার। সত্য যদি প্রচারের চেয়ে গুরুত্ব পায়, তবে আসল সমাধান সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *