মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের কথা ভাবছেন?
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে হতাশ এবং ক্ষুব্ধ মনোভাব প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অংশ নেওয়ার পর তিনি আনুমানিক কথা হাওয়ায় ছেড়ে দিলেন—আর সেই খবর ঘুরেফিরে এখন সবার মুখে।
বৈঠকে কী হয়েছিল?
বৃহস্পতিবার দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠক শেষে মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় তিনি ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন। বৈঠকে উপস্থিত সূত্র মারফৎ জানা গেছে, তিনি বলেছেন, “যদি কাজ করতে না পারি, তাহলে পদে থাকা কেন?” এমন প্রশ্ন তুলে ধরেন তিনি।
পদত্যাগের সম্ভাবনা আছে কি?
এর পরেই সন্ধ্যায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। এ পর্যায়ে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, “অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন।”
এর সঙ্গে সঙ্গে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে জল্পনা—কি সত্যি সত্যিই পদত্যাগ করতে চলেছেন প্রধান উপদেষ্টা?
“কাজ করতে না পারলে কেন থাকব?”
বৈঠকে উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলার সময় মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “আমি কি করছি? কোথাও কোনো সংস্কার হচ্ছে না।” এমনকি তিনি এক পর্যায়ে বলেন, “আমাদের মধ্যে থেকেই আরেকটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করুন। কারণ আমি চলে যেতে চাই।”
এ কথা শোনার পর উপদেষ্টাদের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ
প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া কঠিন। পুলিশ ও প্রশাসন যদি ব্যালট ছিনতাই রোধ করতে না পারে, তাহলে তিনি নিজেই দায়ী হবেন। এ বিষয়টি তিনি স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন।
ভাষণের খসড়া তৈরি হয়েছিল
বৈঠকের এক পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। এমনকি ভাষণের একটি খসড়াও তৈরি হয়েছিল। তবে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না যে তিনি কবে কিংবা কখন ভাষণ দেবেন।
নাহিদ ইসলামের মন্তব্য: “তিনি কাজ করতে পারছেন না”
নাহিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “মুহাম্মদ ইউনূস বলছেন, আমি যদি কাজ করতে না পারি… যে জায়গা থেকে তোমরা আমাকে আনছিলে একটা গণ–অভ্যুত্থানের পর। দেশের পরিবর্তন, সংস্কার…। কিন্তু যেই পরিস্থিতি যেভাবে আন্দোলন বা যেভাবে আমাকে জিম্মি করা হচ্ছে। আমি তো এভাবে কাজ করতে পারব না।”
এ কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে, তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করছেন রাজনৈতিক অসহযোগিতা নিয়ে।
এনসিপি অনুরোধ করেছে: “পদত্যাগ করবেন না”
নাহিদ ইসলাম প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগ না করার অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও দেশের ভবিষ্যৎ—সবকিছু মিলিয়ে উনি যাতে শক্ত থাকেন এবং সব কটি দলকে নিয়ে যাতে ঐক্যের জায়গায় থাকেন।”
এ বিষয়ে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে সবাই মিলে মুহাম্মদ ইউনূসকে সহযোগিতা করবেন।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে?
বর্তমানে অবস্থা এমন যে, মুহাম্মদ ইউনূস যেকোনো মুহূর্তে পদত্যাগ করতে পারেন। তবে তা কখন হবে বা হবে কি না, তা নির্ভর করছে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর সহযোগিতা ও দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির উপর।
সব মিলিয়ে: দেশের ভবিষ্যতের হাল কে ধরবেন?
মুহাম্মদ ইউনূস যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে দেশের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি আমূল পাল্টে যেতে পারে। এখন সবার চোখ তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।