ট্রাম্পের ভিডিও চালিয়ে অপমানের খেলা
গত বুধবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে এমন এক ঘটনা ঘটেছে যা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে গোটা বিশ্বে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা যখন ছিলেন সামনের সিটে, ঠিক তখনই ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি ভিডিও চালিয়ে দেন , যা ছিল কোনো সত্য নয়—শুধুই মিথ্যা প্রচার!
ভিডিওটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গদের ওপর গণহত্যা নিয়ে। কিন্তু সেটা ছিল কোনো গণহত্যা নয়—এটা ছিল কৃষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর একটি স্মৃতিস্তম্ভ।
“এটা এক ভয়ানক দৃশ্য” – ট্রাম্পের মিথ্যা দাবি
ট্রাম্প খুশি মনে বলেছিলেন, “এটা এক ভয়ানক দৃশ্য, এমনটা আমি আগে কখনো দেখিনি।” তিনি দাবি করলেন, এটি দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গদের ওপর গণহত্যার প্রমাণ। কিন্তু বাস্তবতা অন্য।
গত ১০ বছরে বহুবার এই দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করা হয়েছে। ট্রাম্পের নিজের পররাষ্ট্র দপ্তরও ২০২০ সালের শেষের দিকে এক প্রতিবেদনে বলেছে, ২০১৮-১৯ এ দক্ষিণ আফ্রিকায় মোট ২১ হাজার ২২টি হত্যাকাণ্ড হয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ৪৭ জন কৃষক নিহত হয়েছেন—অর্থাৎ মাত্র ০.২% ।
আগেও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে অপমান করেছিলেন ট্রাম্প
এই ঘটনা আদৌ নতুন নয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকেও একইভাবে অপমান করার চেষ্টা করেছিলেন ট্রাম্প। তিনি তখন ক্ষমতায় ছিলেন। এবারও তাঁর আচরণে তাই প্রতিফলিত হচ্ছে—এক অদক্ষ, অনৈতিক নেতার মানসিকতা।
ট্রাম্পের আচরণ কী বিশ্বকে বার্তা দিচ্ছে?
এসব থেকে কী বোঝা যায়? বোঝা যায় কী ভয়ংকর অদক্ষতা, কুসংস্কারাচ্ছন্নতা ও জ্ঞানের ঘাটতি নিয়ে ট্রাম্প বিশ্বকে পরিচালনা করছেন। এটি শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, গোটা বিশ্বের জন্য বিপদের ইঙ্গিত।
রামাফোসাকে অপমান করা নিছক আকস্মিক ঘটনা নয়। এটি একটি বার্তা। এতে দেখা যায় যে ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র এখন বাস্তবতা ও বিজ্ঞানের চর্চাশূন্য, একটি নাটকীয় রিয়েলিটি টিভি অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এখানে সত্যের কোনো মূল্য নেই। মিথ্যাই রাজত্ব করছে।
“আমি জানি বর্ণবাদ কী জিনিস!” – একজন দক্ষিণ আফ্রিকানের ক্ষোভ
আমি জন্মেছি দক্ষিণ আফ্রিকায়, ভয়ংকর বর্ণবাদী সমাজের মধ্যে। আমি এই বর্ণবাদ জানি। আমি তা প্রতিদিন অনুভব করেছি, সহ্য করেছি। আজকের স্বাধীন, অবর্ণবাদী, গণতান্ত্রিক দক্ষিণ আফ্রিকাকে কেউ যদি সেই সন্ত্রাসী ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করে, তাহলে আমার গা ঘিন ঘিন করে।
অথচ ট্রাম্প ঠিক তা-ই করেছেন। ট্রাম্প শুধু দক্ষিণ আফ্রিকাকে অপমান করছেন না, তিনি মিথ্যা প্রচার করে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকেই কলুষিত করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতা আরও ভয়ংকর!
ট্রাম্পের এই কর্মকাণ্ড শুধু ভয়ংকর নয়, এই মুহূর্তে যা সবচেয়ে উদ্বেগজনক, তা হলো যুক্তরাষ্ট্রের জনমনে এসব ঘটনার বিরুদ্ধে এক নীরবতা বিরাজ করছে।
আমি আজ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতি অবিচার নিয়ে ক্ষুব্ধ নই। আমি দুঃখিত ও শোকাহত আমার নিজের জন্য। আমি দুঃখিত আমাদের মতো মানুষদের জন্য—যারা দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসনের মধ্যে বড় হয়ে বিশ্বাস করেছি যে যুক্তরাষ্ট্র সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকবে।
কিন্তু আজ একজন প্রেসিডেন্ট আগের যুগের রাজার মতো সুপ্রিম কোর্টের আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানান। সত্যের ধার না ধেরে সিদ্ধান্ত নেন।
ছাত্রদের গুম, বিরোধীদের নিখোঁজ – এটা কি আমাদের কাঙ্খিত গণতন্ত্র?
আজ যখন ছাত্রদের মুখে কাপড় বেঁধে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন যুক্তরাষ্ট্র আর গণতন্ত্রের বাতিঘর থাকে না। সেটি হয়ে ওঠে আমার দেখা অতীতের বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকা। যেখানে সামান্য একটু বিরুদ্ধ চিন্তাই ডেকে আনে গুম, নিখোঁজ বা মৃত্যু।
ট্রাম্পের নৈতিক দেউলিয়াপনা প্রকাশ পায় আরেক মুহূর্তেও
বুধবারের ঘটনায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল, যা ট্রাম্পের নৈতিক দেউলিয়াপনা উন্মোচন করে দেয়। এক সাংবাদিক ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, তিনি কেন কাতারের কাছ থেকে ‘উপহার হিসেবে’ একটি বিমান নিচ্ছেন?
ট্রাম্প প্রশ্নকারী সাংবাদিককে ‘বোকা’ ও ‘অজ্ঞ’ বলে গালাগাল দেন। বলেন, ‘একটা দেশ যদি মার্কিন বিমানবাহিনীকে বিমান দেয়, তাহলে সেটা তারা আমাদের সাহায্য করার জন্যই দিচ্ছে।’
এরপর রামাফোসা হেসে বলেছিলেন, ‘দুঃখিত, আমার কাছে এমন কোনো বিমান নেই, যা আপনাকে দিতে পারি।’ ট্রাম্প বোঝেননি, সেই কথায় রামাফোসার কী বিদ্রূপ লুকিয়ে ছিল; বরং তিনি নিজের দুর্নীতিপরায়ণতা আরও খোলাসা করে বললেন, ‘ইশ্, যদি থাকত! আপনি দিলে কিন্তু আমি সেটা নিয়ে নিতাম।’
ট্রাম্প – নগ্ন সম্রাটের মতো নিজেকে উন্মোচন করছেন
এই তো ট্রাম্প! নগ্ন সম্রাট। এমন একজন নেতা, যিনি টাকাপয়সার পূজারি। যিনি জানেনই না নিজের কাজগুলো বিশ্বের চোখে কতটা অনৈতিক ও দুর্নীতিগ্রস্ত দেখায়।
🔗 Outbound Link Suggestions:
- The Guardian – Trump South Africa Incident
- Al Jazeera – US Foreign Policy Under Trump
- BBC World – Cyril Ramaphosa Reaction