জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের দলের আর্থিক ও তহবিল ব্যবস্থাপনার জন্য একটি বিস্তারিত নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, যার মূল লক্ষ্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা। দলটি জানিয়েছে, এখন থেকে অনুদান গ্রহণ করা হবে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ব্যাংকিং চ্যানেল, মোবাইল ব্যাংকিং, ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অথবা সরাসরি রসিদ প্রদানের মাধ্যমে। কোনো ব্যক্তিকে ব্যক্তিগতভাবে অর্থ প্রদান না করার জন্য দলের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত প্রকাশ:
বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই নীতিমালা ঘোষণা করা হয়। দলের কোষাধ্যক্ষ এস এম সাইফ মোস্তাফিজ নীতিমালার মূল দিকগুলো তুলে ধরে বলেন, কালো টাকা, অজ্ঞাত উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ, বিদেশি সরকারের অনুদান বা অপরাধমূলক কার্যক্রমের সাথে জড়িত অর্থ গ্রহণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই মাসের গণ-আন্দোলন যেমন সাধারণ মানুষের চাঁদায় পরিচালিত হয়েছিল, এনসিপিও সেই ধারা অনুসরণ করে তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে প্রাতিষ্ঠানিক ও ডিজিটাল রূপ দিতে চায়। তিনি বলেন, “ট্র্যাডিশনাল গণচাঁদা অব্যাহত থাকবে, তবে ডিজিটাল সিস্টেমের মাধ্যমে দেশ ও বিদেশ থেকে অনুদান সংগ্রহের উপর জোর দেওয়া হবে।” তিনি সতর্ক করে বলেন, দলের নির্ধারিত অ্যাকাউন্ট বা ফাইন্যান্স টিমের বাইরে কেউ যদি এনসিপি বা দলের ছাত্র সংগঠনের নামে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করে, তবে তা শৃঙ্খলা কমিটিকে জানানোর জন্য। নাহিদ ইসলাম আরও মন্তব্য করেন, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে অস্বচ্ছ অর্থায়নই পেশিশক্তি ও দুর্নীতির মূল কারণ, এবং এই অবস্থার পরিবর্তনে নির্বাচন কমিশনের কঠোর ভূমিকা প্রয়োজন।
অডিট ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ:
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন জানান, দলের শুভাকাঙ্ক্ষী, সদস্য এবং সাধারণ জনগণ তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (https://donate.ncpbd.org) ব্যবহার করে অথবা সরাসরি দলের কার্যালয়ে রসিদ কেটে অনুদান দিতে পারবেন। তিনি আরও জানান, দলের সদস্যদের এককালীন ও মাসিক চাঁদা, সদস্য ফরম বিক্রি এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুদান থেকে প্রাপ্ত অর্থেই দলের বর্তমান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আখতার হোসেন প্রতিশ্রুতি দেন যে, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের সময় দলের পূর্ণাঙ্গ অডিট রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে এবং প্রতিবছর একটি অনুমোদিত অডিট ফার্মের মাধ্যমে আয়-ব্যয়ের হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে, যা দলের ওয়েবসাইটেও পাওয়া যাবে।
দলের দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ যোগ করেন, আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে তিন মাস, ছয় মাস এবং বার্ষিক ভিত্তিতে দলের আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষা করা হবে।
প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনা:
কোষাধ্যক্ষ এস এম সাইফ মোস্তাফিজ জানান, প্রতিটি অনুদানের জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে রসিদ তৈরি, অনলাইন ডেটা এন্ট্রি এবং একটি ইউনিক পরিচিতি নম্বর প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাঁচ হাজার টাকার অধিক অনুদানের ক্ষেত্রে দাতার পরিচয় গোপন রাখা হলেও, দলীয় প্রয়োজনে তা প্রকাশ করা হতে পারে। তিনি আরও জানান, দলের ওয়েবসাইটের ড্যাশবোর্ডে অনুদানের মোট পরিমাণ এবং জেলাভিত্তিক অনুদানের তথ্য লাইভ দেখা যাবে। এনসিপি বর্তমানে ১০০ টাকা মূল্যের সদস্য ফরম বিতরণের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য তহবিল সংগ্রহের আশা করছে।
এনসিপির এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক দলগুলোর আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনার ক্ষেত্রে একটি অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে। 🇧🇩🏦