দীর্ঘ ৫৫ মাসের নীরবতা ভেঙে ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে যখন ফ্লাডলাইট জ্বলে উঠলো, তখন যেন শুধু আলো নয়, জ্বলে উঠলো গোটা দেশের ফুটবল আবেগ! আর এই প্রত্যাবর্তনের রাতকে আরও রঙিন করে তুললেন ‘নতুন বাংলাদেশি’ হামজা চৌধুরী। তাঁর গোলেই ভুটানের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে জয় পেল বাংলাদেশ। গ্যালারিতে তখন একটাই সুর – “বাংলাদেশ! বাংলাদেশ!” 🇧🇩✨
হামজার ঐতিহাসিক গোল ও মাঠের উন্মাদনা:
ম্যাচের মাত্র ৬ মিনিট! জামাল ভূঁইয়ার কর্নার থেকে হামজা চৌধুরীর নিখুঁত হেডে বল জড়িয়ে যায় ভুটানের জালে। ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া, লেস্টার সিটির হয়ে প্রিমিয়ার লিগে খেলা এই মিডফিল্ডার বাংলাদেশের জার্সিতে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই পেয়ে গেলেন প্রথম আন্তর্জাতিক গোল। মুহূর্তেই গর্জে ওঠে স্টেডিয়াম, যেন বহুদিনের জমানো উল্লাস ফেটে পড়ল। এই গোলের পর বাংলাদেশ আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। ৩২ মিনিটে অভিষিক্ত ফাহামিদুল ইসলামের শট, এরপর জামালের প্রচেষ্টা – সবকিছুতেই ছিল আত্মবিশ্বাসের ছাপ।
বৈচিত্র্যময় একাদশ ও কোচের পরিকল্পনা:
এদিন বাংলাদেশের একাদশে একসঙ্গে পাঁচ প্রবাসী ফুটবলার – জামাল, হামজা, ফাহামিদুল, কাজেম ও তারিক কাজী খেলেছেন। রক্ষণে ছিলেন দুই ভাই সাদ ও তাজ উদ্দিন। প্রথমার্ধে কিছুটা সমন্বয়ের অভাব থাকলেও, দ্বিতীয়ার্ধে কোচ কাবরেরা হামজা, জামাল ও কাজেমকে তুলে হৃদয়, মোরছালিন ও ইব্রাহিমকে নামান। সামনে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ থাকায় এই পরিবর্তন ছিল যৌক্তিক।
দ্বিতীয়ার্ধের গোল ও মাঠের বাইরের ঘটনা:
বদলি খেলোয়াড় নামানোর পরই ৪৮ মিনিটে সোহেল রানার প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে নেওয়া দুর্দান্ত শটে দ্বিতীয় গোল পায় বাংলাদেশ। এরপর রাকিব, ফাহিমরা সুযোগ তৈরি করলেও গোল বাড়েনি। তবে, ম্যাচের বাইরের অব্যবস্থাপনা কিছুটা হলেও আনন্দের রঙে কালি ছিটিয়েছে। টিকিট হাতে থাকা সত্ত্বেও অনেক দর্শক মাঠে ঢুকতে না পেরে ক্ষুব্ধ হন, যা বাফুফের ম্যাচ আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। 😟
হামজার প্রতি দর্শকের ভালোবাসা:
ম্যাচের ৭০ মিনিটের দিকে ঘটে এক অভাবনীয় ঘটনা! এক আবেগাপ্লুত দর্শক গ্যালারি টপকে মাঠে ঢুকে পড়েন হামজা চৌধুরীর সাথে ছবি তোলার জন্য। ইউরোপের মাঠে এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা গেলেও, বাংলাদেশে এটি বিরল। এই ঘটনাই যেন প্রমাণ করে, হামজাকে ঘিরে দেশের ফুটবলপ্রেমীদের উন্মাদনা কতটা! 🥰
শেষ মুহূর্ত ও আগামীর আশা:
শেষদিকে ভুটান একটি ভালো সুযোগ পেলেও গোলরক্ষক মিতুল মারমার দৃঢ়তায় গোল হজম করতে হয়নি বাংলাদেশকে। ম্যাচ শেষে ফাহামিদুল তাঁর পরিবারের সাথে দেখা করেন, অনেকে হামজার সাথে সেলফি তোলার চেষ্টা করেন। প্রেসিডেন্ট বক্সে বসে এই আনন্দ উপভোগ করেন বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলার জন্য সদ্য ঢাকায় আসা শমিত সোম।
এই জয় শুধু মাঠের নয়, অনেক অপেক্ষার অবসান। হাজার পনেরো দর্শকের সামনে এই রাত ছিল ফুটবলের নবজাগরণের। ফিরে এসেছে সেই পুরোনো দিনের আলো, আত্মবিশ্বাস আর উল্লাস! 🇧🇩❤️
বাংলাদেশ দল: মিতুল মারমা, সাদ উদ্দিন, তপু বর্মণ, তাজ উদ্দিন, তারিক কাজী, সোহেল রানা, হামজা চৌধুরী (হৃদয়), ফাহামিদুল ইসলাম (ফাহিম), জামাল ভূঁইয়া (মোরছালিন), কাজেম শাহ (ইব্রাহিম) ও রাকিব হোসেন (আল আমিন)। (ব্র্যাকেটে বদলি খেলোয়াড়)