Telegram Channel
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তিনটি রাজ্যে দেড় বছর ধরে খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে আসছে চট্টগ্রামের কালুরঘাটের বিএসপি ফুড প্রোডাক্টস। স্থলপথে ভারতে রপ্তানির ওপর ভর করেই ব্যবসা করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। গত শনিবার ভারত সরকারের পক্ষ থেকে স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে কিছু পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করায় প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
বিএসপি ফুড প্রোডাক্টস: ঝুঁকি বেশি
বিএসপি ফুড প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অজিত কুমার দাস জানান, “আমাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রায় পুরোটাই রপ্তানি হয়। আমাদের উৎপাদিত কুকিজ, টোস্ট ও সল্টেড বিস্কুটের বড় বাজার আসাম, ত্রিপুরা ও কলকাতা। এখন আসাম ও ত্রিপুরায় যদি কলকাতা হয়ে ঘুরপথে পণ্য পাঠাতে হয়, তাহলে পরিবহন খরচই বাড়বে এক লাখ টাকা। বাড়তি এ খরচ বহন করা ক্রেতার পক্ষে অসম্ভব। আবার রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেলে উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।”
ভারতের বিধিনিষেধের আগে ৪২ হাজার কার্টনের খাদ্যপণ্যের একটি চালানের কার্যাদেশ ছিল। এসব খাদ্যপণ্য উৎপাদনও হয়েছে। তবে এখন এসব পণ্যের রপ্তানি আটকে গেছে।
ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের বেশি ঝুঁকি
ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বিএসপি ফুড প্রোডাক্টসের মতো অনেক ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে। অন্য খাতের চেয়ে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং প্লাস্টিক পণ্য খাতের কোম্পানিগুলোর ঝুঁকির মাত্রা বেশি, যারা সেভেন সিস্টার হিসেবে খ্যাত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যে পণ্য রপ্তানি করে।
কয়েকজন রপ্তানিকারক জানান, ভারতে কয়েকটি পণ্য রপ্তানির সহজ পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিযোগিতা–সক্ষমতা ধরে রাখা যাবে না। এই ধাক্কা বড় প্রতিষ্ঠান সামলাতে পারলেও ছোটরা পারবে না।
সরকারি পদক্ষেপের আহ্বান
হাতে থাকা ক্রয়াদেশের পণ্য রপ্তানি না করতে পারলে বড় লোকসান গুনতে হবে। তাই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দ্রুত আলোচনা শুরু করে এই সমস্যার সমাধান করার আহ্বান তাঁদের।
আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক আসছে
এদিকে ভারতের বিধিনিষেধ পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে আজ মঙ্গলবার বিকেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন বাণিজ্যসচিব মো. মাহবুবুর রহমান।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিক্রিয়া
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৪,৪৪৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে ৩.৭৫% পণ্য যায় ভারতে। ভারত থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে প্রায় ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য, যা মোট আমদানির ১৪%।
প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও প্লাস্টিক পণ্যের বড় ক্ষতি
গত অর্থবছর বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে ৭ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, আসবাব, সুতার উপজাত, ফল-ফলের স্বাদযুক্ত পানীয় রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এসব পণ্য রপ্তানি করে ১৬৬ প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে অধিকাংশই ছোট-মাঝারি প্রতিষ্ঠান।
ফেনীর স্টারলাইন ফুড প্রোডাক্টস
ফেনীর স্টারলাইন ফুড প্রোডাক্টস গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে সেভেন সিস্টারে পণ্য রপ্তানি করছে। প্রতি মাসে ২৫-৩০ লাখ টাকার প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে তারা।
স্টারলাইন ফুড প্রোডাক্টসের পরিচালক মো. মঈন উদ্দিন জানান, “বর্তমানে আমাদের কাছে ভারতের ৩০-৩৫ লাখ টাকার প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ক্রয়াদেশ রয়েছে। স্থলপথে এসব পণ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করায় আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।”
বিক্রমপুর প্লাস্টিক: ভারত ছাড়া বাজার কম
বিক্রমপুর প্লাস্টিক চার-পাঁচ বছর ধরে ভারতের সেভেন সিস্টারে গৃহস্থালি প্লাস্টিক পণ্য ও প্লাস্টিকের আসবাব রপ্তানি করে। বর্তমানে তাদের কাছে ১৪ থেকে ১৫ হাজার ডলারের রপ্তানি ক্রয়াদেশ রয়েছে।
বিক্রমপুর প্লাস্টিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “আমাদের পণ্য রপ্তানির বড় বাজার ভারত। বিধিনিষেধের কারণে এখন রপ্তানিতে বড় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।”
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ: রপ্তানি আটক
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ গত অর্থবছর ভারতে পাঁচ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ৬৮% পণ্য পাঠানো হয়েছে স্থলপথ দিয়ে। বিধিনিষেধের কারণে গত রোববার বুড়িমারী-চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরে ১৭ ও সিলেটের শেওলা স্থলবন্দরে ২ ট্রাক পণ্যের চালান আটকে যায়।
গ্রুপটির পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল জানান, “বর্তমানে আমাদের কাছে ৬০ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ রয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এসব পণ্য উৎপাদনের গতি আমরা কমিয়ে দিয়েছি।”
পোশাক শিল্পও প্রভাবিত
বাংলাদেশ থেকে গত অর্থবছর ভারতে ৫৫ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। এই রপ্তানির ৭৬% স্থলবন্দর দিয়ে হয়েছে। দেশটিতে শার্ট, প্যান্ট, টি–শার্টের পাশাপাশি শাড়ি-লুঙ্গিও রপ্তানি হয়।